ফেলো কড়ি মাখো তেল।এবার কুমোরটুলিতে ছবি বা ভিডিও তুলতে হলে দিতে হবে টাকা। এতদিন পুজো আসলেই কুমোরটুলি তে একটাই চেনা ছবি ছিল।কেউ শাড়ি পরে ধুনুচি নাচছেন, কেউ আবার মাটির প্রতিমার সামনে দাঁড়িয়ে রিল বানাচ্ছেন। কেউ আবার অসুরের পা ধরে ফোটোশুট করছেন। প্রায় প্রতিদিন লাইট, ফোন, ক্যামেরা নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে রিল বানানো, ছবি তোলার ব্লগার এবং ইউটিউবাররা। শুধু যে নিজেদের ছবি তুলছেন তাই নয়, সঙ্গে মৃৎশিল্পীদের উদ্দেশেও বলছে, ‘কাকু একটু হেসে তাকান’, ‘মায়ের চোখে তুলি রাখুন’। আর তাতেই খট করে একটা শব্দ, সিংহের লেজ খানিকটা ভেঙে গেল। বা কখনও গণেশের হাত বা কখনও দুর্গার হাত ভেঙ্গে যাচ্ছে।এদিকে এসব দেখে অগ্নিশর্মা মৃৎশিল্পী। বলে উঠলেন আর না।
আমাদের কাজের গতি নষ্ট হচ্ছে, মূর্তি ভাঙছে। আমরা তো কোনও শুটিং সেট নই।’
তাই এসবের হাত থেকে বাঁচতে এবং প্রতিমা বাঁচাতে এবারে রীতিমতো রেট চার্ট দরজায় সেঁটে দিলেন নিলু পালের মতো মৃৎশিল্পীরা। ঘাম ঝরিয়ে গড়া মূর্তির সামনে সবাই বিনা ভাড়ায় স্টুডিও বানিয়ে নিচ্ছিলেন, হাসতে হাসতে ঠিক এই কথাই বললেন সনাতন পাল। তিনি আরও বলেন, ‘ওরা যেমন কনটেন্ট বানিয়ে আয় করে, আমরাও তেমন একটু আয় করব। তবে টাকার কথা শুনে অনেকেই পালিয়ে যাচ্ছেন।
কুমোরপাড়ায় নিলু পালের কারখানার বাইরে ঝোলানো একটি বোর্ড। তাতে লেখা, ‘ফোটো ১০০, ভিডিও ৫০০’। বিষয়টি কী তা জানতে ভেতরে ঢুকতেই তিনি বলে উঠলেন, ‘ফ্রিতে কোনও ভিডিও, ফোটো তোলা যাবে না। এই বিষয়ে একরাশ ক্ষোভই উগরে দেন নিলু পাল। বেশ কয়েকটি মূর্তি দেখিয়ে বললেন, ‘এই মূর্তিটা একটা ক্লাবের জন্য বানাচ্ছিলাম। ভিডিও করার সময় দেখি গনেশ এবং দুর্গার হাতটা ভেঙে দিয়েছে।আবার নতুন করে মূর্তি গড়ার সময় নেই।মূর্তি ভাঙলে ক্লাব এক্সট্রা টাকা দেবে না।আর যখন-তখন কাজের মাঝে এসে এসব করা শুরু করছে। আমাদেরও তাতে জোর করে অংশগ্রহণ করিয়ে নিচ্ছে। নিজেদের লোকসান তো আর করা যাবে না। তাই এই বোর্ড ঝুলিয়ে দিলাম।’
এদিকে এক কদম এগিয়ে শিল্পী সঞ্জীব পাল বলেন, না আমি কোনো রেট চার্ট ঝোলাচ্ছি না। আমি একেবারেই কাওকে ঢোকার অনুমতি দিচ্ছি না। এই পদক্ষেপে মৃৎশিল্পীরা আশা করছেন এবারে ব্লগার, ইউটিউবারদের উৎপাত কমবে।