
শিলিগুড়ি, ২৩ জুলাই: শহরের ভক্তিনগর থানার আওতাধীন আশিঘর লোকনাথ বাজারে রাষ্ট্রায়ত্ত এক ব্যাংকের এটিএম ভেঙে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা লুট করল দুষ্কৃতীরা। পুরো ঘটনাটি ঘটে গভীর রাতে, মঙ্গলবার ভোররাতে প্রায় ৩টে নাগাদ।
দুষ্কৃতীরা একটি ট্যাক্সি নম্বরযুক্ত টাটা সুমো করে এসে গ্যাস কাটার দিয়ে এটিএমটি কেটে টাকা লুট করে পালিয়ে যায়। গ্যাস কাটার ব্যবহারের সময় আগুন লেগে যায় এটিএমে।
পুলিশের চোখে পড়েও ব্যর্থ তাড়া, ফের প্রশ্নের মুখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা
লুটের সময়ই আশিঘর আউটপোস্টের পুলিশের নজরে পড়ে যায় টাটা সুমোটি। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় তাড়া। কিন্তু পুলিশের পুরনো জিপ গাড়ি দুষ্কৃতীদের গাড়ির সঙ্গে গতি মেলাতে পারেনি।
ঘোগোমালি, ইস্টার্ন বাইপাস হয়ে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। পরে ভক্তিনগর থানার পুলিশ ডন বোস্কো মোড় থেকে ফের তাড়া করে, কিন্তু মাঝখানে একটি সাদা বড় গাড়ি ঢুকে পড়ায় টাটা সুমোটি চম্পট দিতে সক্ষম হয়।
আগুন, আতঙ্ক ও তদন্ত: ঘটনাস্থলে ছুটে আসে দমকল ও পুলিশ আধিকারিকরা
গ্যাস কাটারে কাটা এটিএমে আগুন লাগায় ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি দমকল কেন্দ্র থেকে একটি ইঞ্জিন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন আইসি ভক্তিনগর, এসিপি রবিন থাপা এবং ডিসিপি (ইস্ট) রাকেশ সিং।
ব্যাংকের এক কর্মীর কাছ থেকে তথ্য নিয়ে পুলিশের অনুমান, প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা লুট হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত ব্যাংক কোনও লিখিত অভিযোগ জমা দেয়নি, যা তদন্তের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে উঠছে।
সিসিটিভি বন্ধ করতে স্প্রে, চুরি করা গাড়ি ব্যবহার
দুষ্কৃতীরা অপারেশনের আগে সিসিটিভি ক্যামেরাগুলিতে কালো স্প্রে করে দেয় যাতে কেউ শনাক্ত না হতে পারে। এরপর পাশের ফাঁকা জায়গায় দাঁড় করানো গাড়িতে উঠে লোপাট হয় তারা।
পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, টাটা সুমোটি চুরি হয়েছিল নিউ জলপাইগুড়ি থানার অম্বিকানগর এলাকা থেকে। এটিএম লুটের পর গাড়িটি ফেলে রেখে যাওয়া হয় মাটিগাড়া থানার এলাকায়।
পর পর লুটের ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পুলিশ প্রশাসনগত এক মাসে উত্তরবঙ্গে এটিএম ও স্বর্ণালঙ্কার লুটের ঘটনা রীতিমতো আতঙ্ক ছড়াচ্ছে—
- ১৩ জুন: ময়নাগুড়িতে ৫৪ লক্ষ টাকার এটিএম লুট
- ১৮ জুন: শিলিগুড়ি শহরে ১১ লক্ষ টাকার এটিএম লুট
- ২২ জুন: শিলিগুড়ির বিধান জুয়েলারি থেকে ২২ কোটি টাকার স্বর্ণালঙ্কার লুট
- ২৩ জুলাই: আবারও শিলিগুড়িতে এটিএম থেকে ১৫ লক্ষ টাকার লুট
এই পরিস্থিতিতে শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিশের গাফিলতি ও পরিকাঠামোর দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
প্রশাসনের অবস্থান
ডিসিপি (ইস্ট) রাকেশ সিং জানিয়েছেন, “দুষ্কৃতীদের ধরতে চেষ্টা চলছে, বেশ কিছু ক্লু পাওয়া গেছে।”
এসিপি (ইস্ট) রবিন থাপা বলেন, “সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে।”
প্রশ্ন রয়ে গেল…পুলিশের তাড়া সত্ত্বেও পালাতে পারল কীভাবে দুষ্কৃতীরা?
- চুরি হওয়া গাড়ি ব্যবহার হলো—কিন্তু সঠিক সময়ে কেন খবর পেল না পুলিশ?
- এক মাসের মধ্যে পরপর তিনটি লুট—এবার কি ধরতে পারবে প্রশাসন?