
রাজা খান, প্রতিনিধি, গোয়ালপোখর / কিশানগঞ্জ | ১ আগস্ট ২০২৫: হরিয়ানা পুলিশের হেফাজতে মারধরের শিকার উত্তর দিনাজপুরের পরিযায়ী শ্রমিক মহম্মদ জুনেইদ এবার চিকিৎসার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হলেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে কিশানগঞ্জের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে চিকিৎসা দিতে অস্বীকার করা হয়।
নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের যুক্তি ছিল –
“ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। হরিয়ানার পুলিশ তদন্তে নেমেছে। আমরা ঝামেলায় পড়তে পারি।”
ফলে চিকিৎসার আশায় যাওয়া পরিবারকে তাঁকে আবার বাড়ি ফিরিয়ে আনতে হয়।
ঘটনার পটভূমি:
২৪ জুলাই রাতে হরিয়ানার পানিপথে নাইট শিফটে কাজ করার সময় স্থানীয় পুলিশ জুনেইদকে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে। আধার কার্ড দেখিয়েও নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারেননি তিনি। বরং পুলিশ তাঁকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মারধর করে, যার ফলে পায়ের হাড় ভেঙে যায় এবং নাক ফেটে রক্ত বের হয়।
পরদিন কারখানার মালিক থানায় গিয়ে জুনেইদকে ছাড়িয়ে আনেন।
বাড়ি ফিরে চিকিৎসা:
বাড়িতে চিকিৎসা করিয়ে পায়ের হাড় ভাঙার বিষয়টি নিশ্চিত হন জুনেইদের পরিবার। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় কিশানগঞ্জে পাঠানো হয় তাঁকে।
সেখানেও ‘পুলিশি ঝামেলার’ ভয়ে নার্সিংহোম ভর্তি নিতে অস্বীকার করে।
জুনেইদের বাবা জামালুদ্দিন বলেন,
“ছেলেটা যন্ত্রণা পাচ্ছিল। তাই কিশানগঞ্জে নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ডাক্তাররা বললেন, পুলিশি ঝামেলা হতে পারে, তাই ভর্তি নেবেন না। নিরুপায় হয়ে আবার বাড়ি ফিরেছি।”
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া:
ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান গোয়ালপোখরের বিধায়ক ও রাজ্যের মন্ত্রী গোলাম রাব্বানী।
তিনি বলেন,
“এটা মোটিভেটেড হামলা। বিহারে বিজেপি শাসন চলছে বলেই ওকে এমন হেনস্থা করা হয়েছে।”
“বাংলাতেই আমি ওর চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যবস্থা করব। এভাবে বাংলা থেকে গিয়ে কেউ যদি অন্য রাজ্যে হেনস্থার শিকার হন, তা বরদাস্ত করা হবে না।”
মূল বার্তা:
এই ঘটনা ফের প্রশ্ন তোলে — পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা, পরিচয়, এবং ন্যায্য চিকিৎসার অধিকার নিয়ে। একইসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া কোনও ঘটনার ‘ঝুঁকি’ দেখিয়ে চিকিৎসা না দেওয়ার প্রবণতা নিয়েও তৈরি হয় নৈতিক বিতর্ক।